Freelancing

রাবি শিক্ষক হাতিয়ে নিলেন ১০ কোটি টাকা
(প্রিয় টেক) ইন্টারনেট ক্লিক করলেই টাকা। সাধারণ মানুষকে এ প্রলোভন দেখিয়ে কোয়া-ল্যান্সার নামে অবৈধ পিটিসি কোম্পানির মাধ্যমে সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলফিক্কর আহম্মেদ। মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ড. জুলফিক্করকে তার অফিসে গতকাল দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত গ্রাহক। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুর এলাকায় কোয়া-ল্যান্সার অফিস ভাংচুর করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া যাবতীয় টাকা আজ বুধবার সকাল ১০টায় পরিশোধ করার অঙ্গীকার করায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা ড. জুলফিক্কর আহম্মেদকে ছেড়ে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, রাবি অধ্যাপক ড. জুলফিক্কর আহম্মেদ কোয়া-টাইমেট কোয়ালিটি (ইন্টা.) লিমিটেড নামের একটি জয়েন্টস্টক কোম্পানি খোলেন। এ কোম্পানির এমডি তিনি নিজেই এবং চেয়ারম্যান তার স্ত্রী মর্জিনা রহমান ও তার বাবা আবদুল খালেক জোনাল অফিসার। কোয়া টাইমেট কোয়ালিটি লিমিটেড নামের ওই জয়েন্টস্টক কোম্পানির অন্তরালে ৬ মাস আগে থেকে তিনি কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই এমএলএম এবং কোয়া-ল্যান্সার পিটিসি কার্যক্রম চালু করেন। ওই অবৈধ পিটিসি ও এমএলএম কোম্পানিতে সাতক্ষীরার প্রায় ৫ হাজার গ্রাহক আইডি (ড্যান) খোলেন। আইডিপ্রতি এক বছর মেয়াদের জন্য তিনি ১৫ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। বিনিময়ে তিনি প্রতিটি আইডিতে মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। শর্ত অনুযায়ী প্রতিদিন প্রতি আইডিতে ১২৫টি অ্যাড ভিউ করতে হবে। কিছু কিছু গ্রাহককে তিনি উপরোক্ত শর্তে স্ট্যাম্প (দলিল) করে দেন। ড. জুলফিক্কর তার কোম্পানির লোকসান দেখিয়ে হঠাৎ করে ২৮ জুন পিটিসির সার্ভারে ঘোষণা দেন, এখন থেকে তিনি মাসে আইডিপ্রতি ১ হাজার টাকা করে কেটে নেবেন। এ ঘটনার পর সাধারণ গ্রাহকরা অফিসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। ১ জুলাই তিনি একই অজুহাত দেখিয়ে আইডিপ্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা কেটে নেওয়ার ঘোষণা দিলে গ্রাহকরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত চাইলে তিনি টাকা দিতে তালবাহানা শুরু করেন। গতকাল সকালে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত গ্রাহক অফিসের সামনে জড়ো হয়ে তারা তাদের সমুদয় টাকা ফেরত চান। সকাল ১১টায় জুলফিক্কর আহম্মেদ তার অফিসে এলে গ্রাহকরা তাকে অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। উত্তেজিত জনতা এ সময় তার অফিসের একটি কক্ষ ভাংচুর করেন। পরে খবর পেয়ে সাতক্ষীরার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসরুবা ফেরদৌসের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। উপস্থিত শত শত গ্রাহকের দাবির মুখে ড. জুলফিক্কর আহম্মেদ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বুধবার সকাল ১০টায় গ্রাহকদের যাবতীয় টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর পুলিশ তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়। জানা গেছে, ড. জুলফিক্কর আহম্মেদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগড়দাঁড়ী গ্রামের জামায়াত নেতা আবদুল খালেকের ছেলে। এক সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাতক্ষীরার আগড়দাঁড়ি মাদ্রাসা থেকে তিনি দাখিল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরে কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অভিযোগের ব্যাপারে ড. জুলফিক্কর জানান, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আমি বিদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লিক করে টাকা আয় করে থাকি। বিদেশ থেকে পাওয়া ওই টাকা গ্রাহকদের দিয়ে থাকি। পিটিসি কোম্পানির কোনো বৈধ অনুমোদন রয়েছে কি-না তা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়েছি। প্রয়োজনে ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সাতক্ষীরার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসরুবা ফেরদৌস বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। ড. জুলফিক্কর আহম্মেদ কোয়া-ল্যান্সার নামের পিটিসি কোম্পানির সপক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment

I like this